77 views

1 Answer

0 like 0 dislike
by

পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয় অ্যামাজন (Amazon) কে।

image

ভৌগোলিক দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম অরণ্য আমাজন। আমাজন অরণ্য আমাজন জঙ্গল নামেও পরিচিত, যা দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদীবিধৌত অঞ্চলে অবস্থিত বিশাল বনভূমি।

৭০ লাখ বর্গকিলোমিটার অববাহিকা পরিবেষ্টিত এই অরণ্যের প্রায় ৫৫ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকা মূলত আর্র্দ্র জলবায়ু দ্বারা প্রভাবিত। ৯টি দেশজুড়ে এই অরণ্য বিস্তৃত।

আমাজন অরণ্যের শতকরা ৬০ ভাগ রয়েছে ব্রাজিলে, ১৩ ভাগ রয়েছে পেরুতে এবং বাকি অংশ রয়েছে কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, গায়ানা, সুরিনাম এবং ফরাসি গায়ানায়।

পৃথিবীজুড়ে যে রেইনফরেস্ট রয়েছে, তার অর্ধেক এই অরণ্য নিজেই। নানা প্রজাতির জীবজন্তুর বাসস্থান হিসেবে সমৃদ্ধ এই আমাজন। এই বনে প্রায় ৩৯০ বিলিয়ন বৃক্ষ রয়েছে, যেগুলো প্রায় ১৬ হাজার প্রজাতিতে বিভক্ত। আমাজন পৃথিবীতে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের একটি।

এই বনের নদী (আমাজন নদী) বেশির ভাগ নদীর উৎস। এই নদী বিশ্বে প্রচুর পানির জোগান দেয়ার পাশাপাশি ৪৫ লাখ প্রজাতির পোকামাকড়, ৪২৮ প্রজাতির উভচর, ৩৭৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৩ হাজার প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণীকে বাঁচিয়ে রেখেছে। শুধু তাই নয়, প্রতিবছর ২শ’ কোটি মেট্রিক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে পৃথিবীর ২০ শতাংশ অক্সিজেন সরবরাহ করে আমাজন। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা এই গভীর রেইন ফরেস্টকে এজন্য পৃথিবীর ফুসফুসও বলা হয়।

কিছুদিন ধরে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে এই ফুসফুস। গত আট মাসে ৭২ হাজার বারেরও বেশি আগুন লেগেছে এই অরণ্যের নানা প্রান্তে। এতে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমাজনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ফলে গোটা বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনে প্রবল প্রভাব পড়ছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এক টুইটে আমাজনের আগুন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে লিখেছেন- আমাদের ঘর পুড়ছে, যা পুরো বিশ্বের অক্সিজেনের ২০ শতাংশ জোগান দেয়। আমাজনে দাবানলের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে ২ হাজার ৭শ’ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ব্রাজিলের রাজধানী সাও পাওলো। এই শহরে দিনের বেলাও প্রায়ই অন্ধকার নেমে আসছে ।

ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্পেস রিসার্স (ইনপে) বলছে, দাবানলে প্রতি মিনিটে আমাজনের প্রায় ১০ হাজার বর্গমিটার এলাকা পুড়ে যাচ্ছে। তারা আরও জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে- বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলেই দাবানলে আক্রান্ত হচ্ছে আমাজনের জঙ্গল। আমাজনের জঙ্গলে যে দাবানল হতো না, তা নয়। তবে গত বছরের এই একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরে ৮৩ শতাংশ বেশি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ইনপে-র এই তথ্য সামনে আসার পর একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জার বোলসোনারোর নির্দেশে বরখাস্ত করা হয়েছে ইনপে-র শীর্ষ কর্মকর্তা রিকার্ডো গ্যালভাওকে। অভিযোগ আনা হয়েছে, তিনি ওই সংস্থার মাধ্যমে ভুল তথ্য রটাচ্ছেন।

এই ঘটনার পরপরই সামনে এসেছে আরেক তথ্য। সম্প্রতি ক্ষমতায় আসার পরে দেশের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তহবিল বরাদ্দ অনেক কমিয়ে দিয়েছেন বোলসোনারো। মনে করা হচ্ছে, সরকারকে কাঠগড়ায় তুলতে আমাজনের জঙ্গলে ইচ্ছে করে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে ক্ষুব্ধ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। ইনপের ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ফেসবুক লাইভে’ বোলসোনারো জানান- যা ঘটছে, এসবকিছুই এনজিওর লোকদের আমাজানে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে আসার দিকে ইঙ্গিত করছে।

খনিজ পদার্থের ভাণ্ডার আমাজন বন। খনিজ পদার্থের খোঁজে আমাজনের বন সাফ করে খনন কাজ চালানো হয়। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি মিনিটে একটি ফুটবল মাঠের সমান জঙ্গল কাটা হচ্ছে এখানে। কার্বন ছাকনি হিসেবে পরিচিত চিরসবুজের এ জায়গা যে এ ঘটনার পর তার কার্যক্ষমতা হারাবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত গবেষকরা। বস্তুত আমাজন পুড়ছে না, পুড়ছে অসহায় মানুষ; পুড়ছে নিরীহ লাখো প্রাণী, ভারি হয়ে আসছে বায়ুমণ্ডল, ম্লান হয়ে আসছে পরিবেশ, ফিকে হয়ে যাচ্ছে বেঁচে থাকা। যেভাবেই হোক, আমাজনকে পুড়তে দেয়া যাবে না। ফুসফুসবিহীন মানুষ কল্পনা যেমন অসম্ভব, আমাজন ছাড়া পৃথিবী কল্পনাও তেমনি। কারও স্বার্থ চরিতার্থ করতে দেয়া যাবে না; সামগ্রিকভাবে পৃথিবীকে নিয়ে ভাবতে হবে।

তথ্যসূত্রঃ Quora

Related questions

20,792 questions

22,887 answers

675 comments

1,451 users

Categories

...