144 views
in রোগ ও চিকিৎসা by

1 Answer

1 like 0 dislike
by

তাবীজ ব্যবহার করা কোন ধরনের শিরক, এ সম্পর্কে আলোচনা করার পূর্বে তাবীযের হাক্কীকত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু আলোচনা করাকে বেশি সংগত মনে করছি। অতএব, আল্লাহর নিকট তাওফীক চেয়ে বলছি: আল্লাহর সাথে শিরক করার অর্থ হল: বান্দা কোন ব্যক্তিকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করে, তার নিকট প্রার্থনা করা, কোন কিছু আশা করা, তাকে ভয় করা, তার উপর ভরসা করা, কিংবা তার নিকট এমন বিষয়ে সাহায্য প্রার্থনা করা যায় সমাধান আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ দিতে পারে না, অথবা তার নিকট মীমাংসা চাওয়া, অথবা আল্লাহর অবাধ্যতা করে তার আনুগত্য করা, অথবা তার কাছ থেকে শরীয়তের বিধান গ্রহণ করা কিংবা তার জন্য (বা তার নামে) যবাই করা, অথবা তার নামে মানত করা, অথবা তাকে এতটুকু ভালোবাসা যতটুকু আল্লাহকে ভালোবাসা উচিত। সুতরাং, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে সকল কথা, কাজ ও বিশ্বাসকে ওয়াজিব বা মোস্তাহাব রূপে নির্ধারণ করেছেন, সেগুলির সব কিংবা কোন একটি গায়রূল্লাহ্‌ তথা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্য করাই হল শিরক। এ সম্পর্কে শায়খ ইবনে কাইয়ূম র. যা বলেছেন, তার সারমর্ম নিম্নরূপ: আল্লাহপাক তাঁর রাসূলগণকে পাঠিয়েছেন, কিতাবসমূহ অবতীর্ণ করেছেন এবং আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, যাতে মানব জাতি তাঁর পরিচয় লাভ করতে পারে, তাঁর ইবাদত করে এবং তাঁর একত্ববাদের স্বীকৃতি দিতে থাকে এবং সম্পূর্ণরূপে তাঁর বিধানই যেন বাস্তবায়িত হয়ে যায়। সকল আনুগত্য তাঁর জন্যই নির্ধারিত হয়ে যায় এবং সমস্ত প্রার্থনা যেন তাঁর উদ্দেশ্যই হয়। জেনে রাখা প্রয়োজন যে, শিরক দুই প্রকার। প্রথমত: যা আল্লাহর জাত (সত্তা), নাম ও গুণাবলির সাথে সংশ্লিষ্ট। দ্বিতীয়ত: যা তাঁর ইবাদত মুয়ামালাতের সাথে সম্পৃক্ত, যদিও শিরকে লিপ্ত বান্দা মনে মনে এই ধারণা পোষণ করে যে, আল্লাহর জাত, গুণাবলি ও কাজে কোন শরীক বা অংশীদার নেই। প্রথমোক্ত শিরক আবার দুই প্রকার যেমন: ১। র্শি‌কুত ত্বাতীল এটাই হচ্ছে সবচেয়ে জঘন্য শিরক। ফিরআউনের শিরক এই প্রকারের একটি দৃষ্টান্ত। উহা আবার তিন প্রকার। প্রথমত: সৃষ্টিকে তার স্রষ্টা থেকে বিচ্ছিন্ন করা। দ্বিতীয়ত: আল্লাহর নাম, গুণাবলি ও কার্যাবলীকে অস্বীকার করে মহান স্রষ্টাকে তাঁর পরিপূর্ণতা থেকে বিচ্ছিন্ন করা। তৃতীয়ত: আল্লাহর সাথে মুয়ামালাত বা কার্যাবলীর মাধ্যমে অস্বীকার করা, যেগুলি আল্লাহর একত্ববাদে বান্দার উপর স্বীকৃতি দেয়া ওয়াজিব। ২। আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ইলাহ বা মা'বুদ সাব্যস্ত করা মূলত: শিরক হচ্ছে সৃষ্টি ও স্রষ্টা হওয়ার জন্য যেসব গুণাবলি দরকার, সেগুলির ক্ষেত্রে কোন লোক সৃষ্টিকে স্রষ্টার সাথে তুলনা বা সাদৃশ্যপূর্ণ করলে, সে মুশরিক হয়ে যাবে। ক্ষতি করা, উপকার করা, দান করা ও দান না করার একক অধিকারী হওয়া ইলাহীর বৈশিষ্ট্য, তথা আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট গুণাবলির অন্তর্ভুক্ত। আর এ সব গুণাবলির একক অধিকারী হওয়ার কারণে প্রার্থনা করা ভয় করা, কোন কিছুর আশা করা এবং ভরসা করা কেবলমাত্র তাঁর সাথেই সম্পৃক্ত হতে পারে। সুতরাং, যদি কোন ব্যক্তি এসব গুণকে কোন মাখলুক বা সৃষ্টির সাথে সম্পৃক্ত করে, তা হলে সে যেন সৃষ্টিকে স্রষ্টার সাথে শরীক করল। আর দুর্বল, নিঃস্ব কোন কিছুকে ক্ষমতাবান, স্বাবলম্বী, স্বয়ং সম্পূর্ণ সত্তার সাথে তুলনা করা খুবই নিকৃষ্ট মানের তুলনা। যে আল্লাহর সাথে সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব, বড়ত্ব জাহির করে এবং তার প্রশংসা করার জন্য, তাকে সম্মান জন্য তার কাছে অবনত হওয়া ও আশা করার জন্য মানুষকে আহ্বান করে, তাহলে ঐ ভয় করা, আশা করা, আশ্রয় প্রার্থনা করা, সাহায্য চাওয়া ইত্যাদির ক্ষেত্রে মানুষের অন্তরকে তার সাথে সম্পৃক্ত করার কারণে নিশ্চয়ই সে আল্লাহর একত্ববাদ ও প্রভুত্বের ক্ষেত্রে সংঘর্ষে লিপ্ত হল। শিরক হর আল্লাহর প্রতি অতি নিকৃষ্ট একটি ধারণা। সুতরাং, আল্লাহ এবং তাঁর সৃষ্টির মধ্যে কোন প্রকার মাধ্যম দাঁড় করানো, তাঁর প্রভুত্ব, রবুবিয়ত ও একত্ববাদের প্রতি চরম আঘাত এবং তার সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করার শামিল। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য এরূপ ধারণা করাকে কিছুতেই অনুমোদন করেন না। আর স্বাভাবিক জ্ঞান ও নিষ্কলুষ প্রকৃতিও উহাকে পরিত্যাগ করে এবং সুস্থ প্রকৃতি ও উন্নত স্বভাবের নিকট এটা সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় বলে বিবেচিত। শায়খ মোবারক ইবনে মাইলী বলেছেন- আল্লাহ ওয়া জাল্লা জালালুহু সর্ব প্রকার শিরক এক সাথে উল্লেখ করে বলেন: قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَا يَمْلِكُونَ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ وَمَا لَهُمْ فِيهِمَا مِنْ شِرْكٍ وَمَا لَهُ مِنْهُمْ مِنْ ظَهِيرٍ ﴿২২﴾ وَلَا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنْدَهُ إِلَّا لِمَنْ أَذِنَ لَهُ (سباء ২২-২৩) অর্থাৎ বল: তোমরা আহ্বান কর তাদেরকে যাদেরকে তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে উপাস্য মনে করতে। তারা আকাশ মণ্ডলী ও পৃথিবীর অনু পরিমাণও মালিক নয় এবং এত-দু-ভয়ে তাদের কোন অংশও নেই এবং তাদের কেউ তাঁর সহায়কও নয়। যাকে অনুমতি দেয়া হয়, সে ব্যতীত আল্লাহর নিকট কারও সুপারিশ ফলপ্রসূ হবে না। (সুরা সাবা ২২ও ২৩ আয়াত) এ থেকে বুঝা গেল যে, উপরোক্ত আয়াতে শিরককে চার ভাগে শ্রেণি বিভাগ করত: প্রত্যেক শিরককে বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এখন আমরা প্রত্যেক প্রকারের জন্য এমন নাম নির্ধারণ করব, যাতে একটি অপটি হতে আলাদাভাবে চিহ্নিত হয়ে যায়। شرك الاحتياز (শিরকুল ইহতিয়াজ) অর্থাৎ মালিকানার শিরক। আসমান ও জমিনের মধ্যে অনু পরিমাণ বস্তুর উপরও অন্য কারো মালিকানাকে আল্লাহ বারী তাআলা অস্বীকার করেছেন। দ্বিতীয়ত: شرك الشياع (শিরকুশ শি'য়া) অর্থাৎ অংশীদারিত্বের শিরক। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা স্বীয় রাজত্ব ও মর্যাদার ক্ষেত্রে অপরের সব ধরনের অংশীদারিত্বকে অস্বীকার করেছেন। তৃতীয়ত: شرك الاعانة (শিরকুল ইয়ানা) অর্থাৎ সাহায্য সহযোগিতার শিরক। আল্লাহ তাআলা তাঁর কাজে অন্য কারো সাহায্যকারী হওয়াকে অস্বীকার করেছেন। যেমন, কোন ব্যক্তি বোঝা উঠিয়ে দেয়ার ব্যাপারে অন্যকে সাহায্য করে। চতুর্থত: شرك الشفاعة (শিরকুশ শাফাআত) অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা এমন কারো অস্তিত্বকেও অস্বীকার করেছেন, যে তার মর্যাদার বলে আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত হয়ে সুপারিশ করে কাউকে মুক্ত করতে পারে। অর্থাৎ, আল্লাহ কোন প্রকার শিরকই পছন্দ করেন না, তা যত দুর্বল ও সূক্ষ্ণই হোক না কেন। তবে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য আল্লাহর কাছে বিনম্র ভাবে অনুমতি লাভ করে সুপারিশ করতো শিরক হবে না। উল্লেখিত আয়াতে সব ধরনের শিরকের কথাই বলা হয়েছে। কেননা, শিরক হবে হয় প্রভুত্বের ক্ষেত্রে, নতুবা কার্যকলাপের মাধ্যমে। আবার প্রথম প্রকারের শিরক হয় আল্লাহর অধিকারকে সম্পূর্ণরূপে নিজ অধিকারভুক্ত করে নিবে, অথবা তার অংশ যৌথভাবে বহাল থাকবে। এমনিভাবে দ্বিতীয় প্রকারের শিরক প্রভুর জন্য সাহায্যকারী হবে, অথবা প্রভুর নিকট অন্য কারো জন্য সাহায্যকারী হবে। এই চার প্রকার শিরকের কথাই উক্ত আয়াতে ধারাবাহিক ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। উক্ত আয়াতের অনুসরণে শিরকের প্রকার সমূহের এরূপ আলোচনা আল্লামা ইবনুল কাইউম র. ব্যতীত, আমার জানা মতে অন্য কেই করেননি। ইবনুল কাইউম রা. এই চারটিকে এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ তাআলা ঐ সকল মাধ্যমকে, মুশরিকরা যেগুলি অবলম্বন করেছিল, সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন করে দিয়েছেন। বস্তুত: যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অপর কাউকে অভিভাবক অথবা সুপারিশকারী হিসাবে গ্রহণ করেছে, তার দৃষ্টান্ত হল মাকড়সার ঘর বানানোর ন্যায়, আর মাকড়সার ঘর হচ্ছে সব চেয়ে দুর্বল ঘর। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন: قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَا يَمْلِكُونَ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ وَمَا لَهُمْ فِيهِمَا مِنْ شِرْكٍ وَمَا لَهُ مِنْهُمْ مِنْ ظَهِيرٍ ﴿২২﴾ وَلَا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنْدَهُ إِلَّا لِمَنْ أَذِنَ لَهُ (سباء ২২-২৩) অর্থাৎ বল: তোমরা আহ্বান কর তাদেরকে যাদেরকে তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে উপাস্য মনে করতে। তারা আকাশ মণ্ডলী ও পৃথিবীর অনু পরিমাণও মালিক নয় এবং এত দু ভয়ে তাদের কোন অংশও নেই এবং তাদের কেউ তাঁর সহায়কও নয়। যাকে অনুমতি দেয়া হয়, সে ব্যতীত আল্লাহর নিকট কারও সুপারিশ ফলপ্রসূ হবে না। (সুরা সাবা ২২ও ২৩ আয়াত) মুশরিকরা যখন কারো নিকট থেকে কোন প্রকার উপকার পাওয়ার আশা করে কেবল তখনই সে তাকে মা'বুদ বা উপাস্য রূপে গ্রহণ করে নেয়। আর বলা বাহুল্য যে, উপকার একমাত্র তার কাছ থেকেই পাওয়া যায়, যার মধ্যে এই চারটি গুণের একটি হলেও বিদ্যমান আছে। গুণগুলি হল: (১) উপাসনাকারী যে জিনিসের আশা করে তার মালিক হওয়া। (২) মালিক না হলে, মালিকের অংশীদার হওয়া। (৩) অংশীদারও না হলে, সে জিনিসের ব্যাপারে মালিকের সাহায্যকারী হওয়া এবং (৪) সাহায্যকারীও না হলে,অন্তত: পক্ষে মালিকের কাছে কারো সম্পর্কে সুপারিশ করার ক্ষমতা রাখা। সুতরাং, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উক্ত আয়াতে শিরকের এই চারটি স্তরকে ধারাবাহিক ভাবে অস্বীকার করেছেন। অর্থাৎ, আল্লাহ দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছেন যে, তাঁর সার্বভৌমত্ব ও রাজত্বে অন্য কারো মালিকানা, অংশীদারিত্ব, সাহায্য সহায়তা এবং তাঁর কাছে সুপারিশের ক্ষমতা বিন্দুমাত্রও নেই। তবে, আল্লাহ যে সুপারিশ সাব্যস্ত করেছেন, সেটা তাঁর অনুমতিক্রমে হয় বলে তাতে মুশরিকদের জন্য কোন অংশ বা সুবিধা নেই। শায়খ মাইলী র. সম্ভবত: আল্লামা ইবনুল কাইয়ূমের রা. এই উক্তি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। তদুপরি তার উক্তি উবনুল কাইয়ূমের উক্তির প্রায় কাছাকাছি। এতে আল্লাহর দ্বীন সম্পর্কে ফিকাহ শাস্ত্রবিদদের অভিন্ন মতের পাওয়া যায়। আবার আবুল বাকা যুফী র. তার কুল্লিয়াত নামক কিতাবে শিরককে ছয় ভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা: ১। شرك الاستقلال (শিরকুল ইসতিকলাল) দুজন ভিন্ন ভিন্ন শরীক সাব্যস্ত করাকে শিরকুল ইসতিকলাল বলা হয়। যেমন, মূর্তি পূজা করা করে থাকে। ২। شرك التبعيض (শিরকুত তাবঈদ) একাধিক মা'বুদের সমন্বয়ে এক মা'বুদ হওয়ার বিশ্বাসকে শিরকুত তাবঈদ বলা হয়। যেমন, নাছারাদের শিরক। ৩। شرك التقرير (শিরকুত তাকরীর) আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন মা'বুদের ইবাদত করা যাতে তারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে তাকে সহায়তা করে। যেমন, প্রাচীনকালের লোকদের শিরক অর্থাৎ জাহেলী যুগের শিরক। ৪। شرك التقليد (শিরকুত তাকলীদ) অন্যদের অনুসরণ করে গাইরুল্লাহর ইবাদত করাকে শিরকুত তাকলীদ বলা হয়। যেমন, জাহেলী মধ্য যুগের শিরক। ৫। شرك الاسباب (শিরকুল আসবাব্‌) ক্রিয়ার প্রভাবকে সাধারণ মাধ্যম সমূহের সাথে সার্বিক ভাবে সম্পৃক্ত করাকে শিরকুল আসবাব্‌ বলা হয়। যেমন, দার্শনিক, জড়বাদী এবং তাদের অনুসারীদের শিরক। ৬। شرك الاغراض (শিরকুল আগরাদ) গাইরুল্লাহর জন্য কোন কাজ করাকেই শিরকুল আগরাদ বলা হয়।

Related questions

20,792 questions

22,887 answers

675 comments

1,448 users

Categories

...